রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০১১

তারা দেশটাকে লুটেপুটে খাচ্ছে



বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বর্তমান সরকারের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, তারা দেশের সর্বনাশ করে নিজেদের ভাগ্য গড়ছে। দেশটাকে লুটেপুটে খাচ্ছে। কেউ যাতে এর প্রতিবাদ করতে না পারে তার জন্য তারা দেশজুড়ে কায়েম করেছে ভীতি ও আতঙ্কের রাজত্ব। তাদের ভয়ে কেউ টু-শব্দটিও করতে পারছে না।
সরকারের গত দুই বছরের কর্মকাণ্ড নিয়ে আজ রোববার বিকেল চারটায় এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। তিনি বলেন, ‘জনগণ দুই সরকারের তুলনা করলেই বুঝতে পারবে, তারা কোন সরকারের সময় কেমন ছিল, আর এখন কেমন আছে, কোন সরকার কেমন উন্নতি করেছে।’
সরকারের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৬ জানুয়ারি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। তুলে ধরেন তাঁর সরকারের কর্মকাণ্ড। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণকে মিথ্যা, ভুলে ভরা ও বাস্তবতা বিবর্জিত বলে উল্লেখ করেন। তিনি প্রায় ঘণ্টাব্যাপী দেওয়া বক্তব্যে বর্তমান সরকারের সমালোচনা ও তাঁর সরকারের সফলতা তুলে ধরেন। এ সময় তিনি তাঁর সরকারের সময়ের দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বৈদেশিক বিনিয়োগে সফলতার কথা উল্লেখ করেন।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় এক মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পন্ন হয়নি বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যকে মিথ্যা আখ্যায়িত করে খালেদা জিয়া বলেন, তাঁর সরকারের আমলে এক হাজার ২৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন করা হয়েছে, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সমীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। আর এই সমীক্ষা প্রতিবেদনটি এই সরকারের আমলেই প্রকাশ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, দেশকে বাঁচাতে হলে গণমানুষের সার্বিক ঐক্য ও প্রতিরোধ দরকার। তাই তিনি দেশের জনসাধারণকে বৃহত্তর ঐক্য ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
খালেদা জিয়ার লিখিত ভাষণের বিস্তারিত বিবরণ নিচে তুলে ধরা হলো:
বিসমিল্লাহির রাহ্মানির রাহিম
প্রিয় দেশবাসী,
উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ,
আসসালামু আলাইকুম।
সকলকে ইংরেজি নতুন বছরের শুভেচ্ছা।
কেমন আছেন আপনারা?
কেমন ছিলেন গত দুইটি বছর?
এই প্রশ্ন আপনাদের মাধ্যমে প্রিয় দেশবাসীকেও করছি।
আমি জানি, আজ দেশের সাধারণ মানুষ কেউ-ই বলতে পারবেন না যে, তিনি ভালো ছিলেন কিংবা ভালো আছেন।
তবে অল্প কিছু লোক নিশ্চয়ই বলবে, তারা ভালো আছে।
এরা দেশের মালিক-মোকতার সেজে বসেছে।
তারা দেশের সর্বনাশ করে নিজেদের ভাগ্য গড়ছে। দেশটাকে লুটেপুটে খাচ্ছে।
কেউ যাতে এর প্রতিবাদ করতে না পারে তার জন্য তারা দেশজুড়ে কায়েম করেছে ভীতি ও আতঙ্কের রাজত্ব।
তাদের ভয়ে কেউ টু-শব্দটিও করতে পারছে না।
আপনারা জানেন, নির্ভীক সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে। তাঁর ওপর বন্দী অবস্থায়ও দৈহিক নির্যাতন চালানো হয়েছে।
জনপ্রিয় সংবাদপত্র দৈনিক আমার দেশ সরকার বন্ধ করে দিয়েছিল। আদালতের রায়ে আমার দেশ এখন আলোর মুখ দেখেছে।
চ্যানেল ওয়ান এই সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। যমুনা টিভির সম্প্রচারের অনুমতি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন বেসরকারি টিভির টকশো সরকারি নির্দেশে বন্ধ করতে হয়েছে।
সম্প্রচারিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু, বক্তব্য ও আলোচক পর্যন্ত সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে।
‘ইউ টিউব’সহ জনপ্রিয় একাধিক আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট তারা বন্ধ করে দিয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রেসক্লাব দখল করে নেওয়া হচ্ছে।
গত দুই বছরে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন। নির্যাতিত হয়েছেন অনেকে।
সবখানে আজ বিপজ্জনক পরিস্থিতি। হামলা, হুমকি, মামলা, গ্রেফতার, খুন, জখম, জুলুম, নির্যাতন, সন্ত্রাসের মাধ্যমে গোটা দেশকে স্তব্ধ করে দেয়া হয়েছে।
শুধু কথা বলে যাচ্ছে একদল স্তাবক।
শাসক আর শাসিত এই দুইভাগে ভাগ করে ফেলা হয়েছে বাংলাদেশকে।
একদলীয় বাকশালী দুঃশাসনের প্রবক্তারা আবার এক-ব্যক্তির শাসন কায়েম করেছে।
এক-ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছার ক্রীতদাসে পরিণত করা হয়েছে বাকি সবাইকে।
মানবতা আজ লাঞ্ছিত। শাসক দলের বাইরের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে অধঃপতিত করা হয়েছে। তাদের কারো মর্যাদা নেই। সামান্যতম নিরাপত্তাবোধও অবশিষ্ট নেই।
শাসক দলের উত্পীড়ন ও ঘৃণা-বিদ্বেষের মাত্রা দেখে সকলের মনে হচ্ছে, এ যেন ভিনেদশী শত্রু-কবলিত এক অচেনা স্বদেশ।
এই ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে বর্তমান শাসক দল তাদের ক্ষমতা আরোহনের তৃতীয় বছরে পা রেখেছে।
দ্বিতীয় বর্ষপূর্ত্তি উপলক্ষে রংচঙে প্রকাশনা ও বর্ণিল প্রচারণা দেশবাসী অবাক হয়ে দেখেছে ও শুনেছে। প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দিয়েছেন। তাঁর অনুগত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ আনন্দ-মিছিল করেছে।
প্রিয় ভাই-বোনেরা,
ছাত্রলীগ যখন আনন্দ-মিছিল করে তখন ছাত্র কিংবা শিক্ষক-সমাজ কেবল নয়, সারা দেশের সকল পর্যায়ের মানুষই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। কেননা, ছাত্রলীগ আজ মানুষের কাছে এক মর্তিমান আতঙ্কের নাম।
খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, নারী-নির্যাতন, বন্দুক-বোমা-চাপাতি-কুড়াল নিয়ে হামলা, দখল, শিক্ষক লাঞ্ছনা, চোরাচালান, মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে এহেন অপকর্ম নেই যার সঙ্গে ছাত্রলীগ জড়িত নয়।
একই রকম ঘৃণিত অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ শাসক দলের অন্যান্য সংগঠন।
সন্ত্রাস চালিয়ে প্রতিবাদী সকল কণ্ঠ তারা স্তব্ধ করে দিয়েছে। এরপর লিপ্ত হয়েছে নিজেদের মধ্যে মারামারি, হানাহানি, সশস্ত্র সন্ত্রাস এবং ভাগাভাগি ও স্বার্থের দ্বন্দ্বে।
এখন কোথাও কোনো হাঙ্গামা হলেই মানুষ জানতে চায়: কোন লীগ কোন লীগের ওপরে হামলা করেছে।
এই হলো দেশের অবস্থা!
কাজেই দুই বছরপূর্তি উপলক্ষে এই ভয়ংকর সন্ত্রাসীদের আনন্দ-মিছিল প্রমাণ করে যে, গত দুই বছরে দেশজুড়ে চলেছে সন্ত্রাস, লুণ্ঠন, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী ও দুষ্কর্মের উত্সব।
আর তাদের উল্লাস দেখে শোষিত, বঞ্চিত, উত্পীড়িত মানুষ হয়ে পড়েছে আরো আতঙ্কিত।
তাদের ভাবনা, আগামীতে এই লুটেরা, সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্তরা হয়তো আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে।
দেশবাসী হয়ে পড়বে আরো বেশি অসহায়।
সাংবাদিক বন্ধুগণ!
যে-কোনো তথ্য-উপাত্তের চাইতে নিজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অনেক বেশি মূল্যবান। কারো বক্তৃতা থেকে কিছু শোনার চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, নিজের দেখা ও জানা বিষয়।
কাজেই আমি কী বক্তৃতা করবো আজ?
দেশের অবস্থা কি সাধারণ মানুষ আমার চাইতে কম জানেন?
সাংবাদিক বন্ধুরাই কি কম দেখছেন আমার তুলনায়?
এই সেদিন ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ম্যানেজিং কমিটির ইলেকশন হয়ে গেল। সকল ভয়-ভীতি, শাসক দলের চোখ রাঙানি, অর্থের ছড়াছড়ি ও লোভনীয় হাতছানিকে ঘৃণাভরে উপেক্ষা করে আপনারাই শাসক দলের বিরোধীদের সেখানে নির্বাচিত করেছেন।
অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, উত্সবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে সুচিন্তিত রায় দেয়ার জন্য আমি আপনাদেরকে এবং আপনাদের মাধ্যমে বৃহত্তর সাংবাদিক সমাজকে প্রাণঢালা অভিননন্দন জানাচ্ছি।
আপনারা আমার চাইতে আরো ভালো করেই জানেন যে, এই নির্বাচনের ফলাফলকে গুণ্ডামির মাধ্যমে বানচালের অপচেষ্টা হয়েছিল। হামলা চালিয়ে ফল পাল্টাতে না পেরে এখন শাসক দলের মদতে মামলার আশ্রয় নেয়া হয়েছে।
কেবল জাতীয় প্রেসক্লাবে নয়, মানুষ যেখানেই সুযোগ ও পরিবেশ পাচ্ছে সেখানেই শাসক দলের বিরুদ্ধে ব্যালট বিপ্লব ঘটাচ্ছে। চট্টগ্রাম সিটির মানুষ সেই প্রমাণ দিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে প্রেসক্লাব, বার ও পেশাজীবী সংগঠনের নির্বাচনে এর প্রমাণ মিলছে।
আসন্ন পৌর নির্বাচন সুষ্ঠু হলে সেখানেও ভোটররা একই রকম রায় দেবেন বলে আমরা দৃঢ়ভাবে আস্থাশীল। তার আভাস বিভিন্ন সংবাদ-মাধ্যমে আপনাদের করা জনমত জরিপেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
সংবাদ-মাধ্যমের বন্ধুগণ,
আপনারা নিজেরাই দেখেছেন গত ২ বছর ধরে ক্ষমতাসীনরা কিভাবে অসত্য কথার তুবড়ি ছুটিয়ে চলেছে।
কিন্তু তাদের ব্যর্থতা এতো সর্বব্যাপী এবং তাদের অপকর্ম এতোটাই পর্বত-প্রমাণ যে, মিথ্যা দিয়ে আজ আর সত্যকে ঢাকা দেওয়া যাচ্ছেনা।
একজন মহান ব্যক্তি বলে গেছেন যে, তুমি কিছু লোককে সব সময়ের জন্য এবং সব মানুষকে কিছু সময়ের জন্য বোকা বানাতে পারো। কিন্তু সমস্ত মানুষকে সব সময়ের জন্য বোকা বানিয়ে রাখা সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের মানুষ বুঝতে পেরেছেন, তাদেরকে ধোঁকা দিয়ে কিছুদিনের জন্য বোকা বানানো হয়েছিল।
এখন তাদের চোখ খুলে গেছে। ধোঁকাবাজদের তারা চিনতে পেরেছেন। এখন অসত্য বলে, ধোঁকা দিয়ে কোনো কাজ হচ্ছে না। তাই ক্ষমতাসীনরা এখন সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে।
দেশের মানুষ বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে দেখে ক্ষমতাসীনরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে দেখে শাসক দল বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের কথাবার্তাতেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে সেই বেসামাল অবস্থার চিত্র।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
ক্ষমতা-আরোহনের দুই বছরপূর্তি উপলক্ষে রেডিও-টিভিতে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ আপনারা শুনেছেন।
ভুল, অসত্য, ভিত্তিহীন ও বিকৃত তথ্যে ভরা এই ভাষণের কী প্রতিক্রিয়া আমি দেব?
তিনি বলতে চেয়েছেন, দেশে তেমন কোনো সমস্যাই নেই। দু’বছরে সব ফয়সালা করে ফেলেছেন।
যা-কিছু বাকি আছে, সেগুলোরও সুরাহা করে দেবেন ২০২১ সালে।
আসলে দেশের বাস্তব ছবি কি তাই বলে?
তিনি এখন এক তথাকথিত ‘রূপকল্প’-এর গল্প শোনাচ্ছেন। ভোটের আগে শুনিয়েছিলেন ডিজিটাল গল্প। ওয়াদা করেছিলেন, দশ টাকা কেজি দরে চাল, ফ্রি সার ও ঘরে ঘরে চাকরি দেবেন।
তাঁর ডিজিটাল স্টোরি এখন ভয়ংকর দুর্নীতি, অযোগ্যতা ও ব্যর্থতায় পরিণত হয়েছে নির্মম পরিহাসে।
৩৮ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে মোটা চাল কেনার সামর্থ হারিয়ে এদেশের গরীব মানুষেরা অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। সারাদেশের চলছে নিরব দুর্ভিক্ষ।
ফ্রি সার ও চাকরি এখন সোনার হরিণ হয়ে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে।
দেশের মানুষ প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে তাই এখন আর কোনো কল্পকাহিনী কিংবা রূপকথা শুনতে চান না।
তাঁরা ক্ষুধার অন্ন চান, শীত নিবারণের বস্ত্র চান। তাঁরা গ্যাস চান, বিদ্যুত্ চান, তৃষ্ণা নিবারণের বিশুদ্ধ পানি চান, চাকরি চান, সুস্থ ও নিরাপদ জীবন চান।
ক্ষমতাসীন সরকার গত দুই বছরে এসব চাওয়ার কতটা পূরণ করতে পেরেছে, দেশের মানুষ সে কথাই জানতে চান।
সাংবাদিক ভাই-বোনেরা,
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের খুব বেশি জবাব দেওয়ার দরকার আছে বলে আমার মনে হয় না। কারণ, তাঁদের গত দুই বছরের পারফরমেন্স আপনাদের সামনে আছে।
দেশের সর্বস্তরের মানুষ তাদের কার্যকলাপের ভুক্তভোগী।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে দ্রব্যমূল্যের যে চিত্র দিয়েছেন, তা সত্য নাকি বিকৃত, সেটা বাজার করতে গিয়ে প্রতিটি নাগরিকই হাঁড়ে হাঁড়ে টের পাচ্ছেন।
আমরা যখন সরকারে ছিলাম, তখন বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও অন্যান্য জিনিসের দাম সাংঘাতিক বেড়ে গিয়েছিল। আমরা ভর্তুকি দিয়ে এবং সুষ্ঠু বাজার-ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য পদক্ষেপের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে এবং জনগণের ক্রয়-ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সক্ষম হয়েছিলাম। কিন্তু সে সময়কার বিরোধী দল আওয়ামী লীগ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির পথ বেছে নিয়েছিল। আর এখন তারা আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির ধুয়া তুলছেন।
অথচ এখন আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বিএনপি আমলের তুলনায় অনেক কম আছে। তারপরেও জিনিষপত্রের দাম জনগণের নাগালের বাইরে চলে গেল কেন?
আমি এ প্রসঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবি’র একটা তুলনামূলক মূল্য-তালিকা দেশবাসীর উদ্দেশে তুলে ধরছি।
আমাদের বিগত সরকারের প্রথম চার বছর জিনিসপত্রের দাম অনেক কম ছিল। ২০০৬ সালে আমরা দায়িত্ব ছাড়ার বছরে সেই দাম একটু বেড়েছিল বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে।
কিন্তু ২০০৬ সালের তুলনায় জিনিষপত্রের দাম এখন বেড়ে প্রায় তিন গুণ হয়ে গেছে।
টিসিবি’র হিসেবে দ্রব্যমূল্যের তুলনামূলক চিত্র:
পণ্য ২০০৬ সাল ২০১০ সাল
মোটা চাল ১৭ টাকা ৩৬ টাকা
সরু চাল ২২ টাকা ৫০ টাকা
আটা (খোলা) ১৮ টাকা ৩৪ টাকা
আলু ৬ টাকা ২২ টাকা
মশুর ডাল ৪৫ টাকা ১১০ টাকা
পেঁয়াজ ১৩ টাকা ৪৫ টাকা ( বাস্তবে ৭০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে গত ডিসেম্বর মাসে)
সয়াবিন (খোলা) ৪৬ টাকা ১০০ টাকা
পাম অয়েল (খোলা) ৩৯ টাকা ৮২ টাকা (বাস্তবে ৮৮)
ডিম (হালি) ১২ টাকা ২৮ টাকা
রসুন ২০ টাকা ২৫০ টাকা
চিনি ৩৭ টাকা ৫৪ টাকা
আদা ৪০ টাকা ১৮০ টাকা
গরুর গোস্ত ১৬০ টাকা ২৬০ টাকা
ব্রয়লার মুরগি ৭০ টাকা ১৪৫ টাকা
মিল্কভিটা দুধ ৩০ টাকা ৫০ টাকা
শেখ হাসিনার ‘আন্দোলনের ফসল’ মঈনুদ্দীন-ফখরুদ্দীনের জরুরি সরকার জিনিষপত্রের দাম ভয়ংকর বাড়িয়ে ফেলে। আজকের ক্ষমতাসীনরা তাদের পদাঙ্কই অনুসরণ করে চলেছেন।
এরই নাম ডিজিটাল সরকারের সাফল্য!
সাংবাদিক বন্ধুরা,
আপনারা জানেন, জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে ক্ষমতাসীনদের লাগামহীন দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সিনিডকেটবাজি, অব্যবস্থাপনা এবং আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতির কারণে।
নানান কারসাজি করে দাম বাড়িয়ে সরকারের লোকরা ফায়দা লুটছে আর কাফফারা দিতে হচ্ছে ক্রেতা-সাধারণকে।
এইসব দুষ্কর্মের কথা সারা দেশের ভুক্তভোগী মানুষ জানলেও প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে সে সব বেমালুম চেপে গিয়েছেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী নিজেই যে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত, সে কথা আমরা সরকার সমর্থক ‘প্রথম আলো’ পত্রিকার মাধ্যমে অনেক আগেই জানতে পেরেছি।
টিসিবির জন্য দেশের ভেতর থেকেই চড়া দামে পেঁয়াজ কেনার বাণিজ্য তিনি তার এক নিকট আত্মীয়কে দিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি উত্তরাঞ্চল থেকে নাকি মঙ্গা ও অভাব বিতাড়িত করেছেন।
আমরা দেখতে পাচ্ছি, মঙ্গা তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন সারা দেশে।
ওএমএস-এর নিম্নমানের চাল কেনার জন্য গরীব-দুঃখী, অভাবী মানুষের দীর্ঘ সারি, তাদের অপুষ্টি-জর্জর দেহ, বেদনাক্লিষ্ট মুখ, হতাশ শূণ্যদৃষ্টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চোখে কি কখনো পড়ে না?
সেই অসহায় মানুষগুলোর ক্ষুধার অন্ন নিয়েও চলছে তেলেসমাতি ও দুর্নীতি।
শাসক দলের সাঙ্গপাঙ্গরা ওএমএস-এর চাল নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি করায় দীর্ঘ লাইনে সারাদিন দাঁড়িয়ে থেকেও অনেক ক্ষুধার্ত মানুষকে খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে।
১৯৭৪ সালে মুজিব আমলের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সময় অনাহারে যখন হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন, সে সময় উপোষী মানুষের লংগরখানার খাদ্য নিয়েও আওয়ামী লীগের লোকেরা চরম দুর্নীতিতে মেতেছিল।
তাদের সেই চুরির স্বভাব আজো যে রয়ে গেছে, সেটা দেশবাসী চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ক্ষুধিত মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে খাওয়ার এই ধারাটা অন্তত: বন্ধ করুন।
নির্বাচনী ওয়াদা অনুযায়ী দশ টাকায় চাল দেয়ার সাধ্য আপনার নেই, আমরা জানি।
বিএনপি সরকারের আমলের প্রথম চার বছরের কথা বলছি না। আমাদের দায়িত্ব ছাড়ার বছরে জিনিসপত্রের যে দাম ছিল, অন্তত: সেই পর্যায়ে দ্রব্যমূল্য নামিয়ে আনুন। দেশবাসী কৃতজ্ঞ থাকবে। আমরাও আপনাকে ধন্যবাদ দেব।
কিন্তু কেবল অসত্য কথার ফুলঝুড়ি দিয়ে সত্যকে আড়াল করার চেষ্টা করলে তো কোনো লাভ হবে না।
প্রিয় বন্ধুগণ,
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন: ‘দুই বছরে আমরা যত কাজ করেছি, এটা কেবল আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষেই সম্ভব। অতীতে কোনো সরকারের পক্ষেই এতো উন্নয়ন কাজ করা সম্ভব হয়নি।’
দেশবাসী বুঝতে পারছে না, আমরাও জানি না গত দুই বছরে এমন কী উন্নয়ন কাজ তারা করেছেন?
সরকার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। কিছু রুটিন কাজ সব সরকারকেই করতে হয়। তাই অতীতের কিছু উন্নয়ন প্রকল্প চালু রাখা এবং রুটিন কাজকর্মকে উন্নয়ন বলে জাহির করার চেষ্টা সত্যি হাস্যকর।
তিনি আরো বলেছেন: ‘জোট সরকারের প্রথম দুই বছর আর আমাদের গত দুই বছরের মধ্যে তুলনা করতে অনুরোধ করব।’
আমরা প্রধানমন্ত্রীর এই অনুরোধকে স্বাগত:জানাই।
২০০১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনে জনগণের ভোটে বিপুল বিজয়ের মাধ্যমে সরকার গঠনের প্রথম দুই বছরেই আমাদের সরকার উন্নয়নের ক্ষেত্রে অর্জন করেছিল বিপুল অগ্রগতি।
· প্রথমেই উন্নয়নের অনুকূল পরিবেশ তৈরির উদ্দেশ্যে অপারেশন ক্লিনহার্ট-এর মাধ্যমে দেশে সন্ত্রাস দমন ও শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা হয়।
· র্যাট এবং পরে র্যাব গঠন করা হয়। এই বাহিনীকে এখনকার মতো দলীয় ও রাজনীতিক নিপীড়নের হাতিয়ার না করে বরং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কাজে লাগানো হয়।
· রাজধানীর সৌন্দর্য ও নাগরিক সুবিধা বাড়ানোর প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।
· পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক পলিথিন ও থ্রি-স্ট্রোক ইঞ্জিন নিষিদ্ধ করা হয়।
· নগরীতে সিএনজি চালিত মোটরযান ও উন্নতমানের বাস চালু হয়।
· যানজট নিরসনে মহাখালী ও খিলগাঁও ফ্লাইওভার তৈরি হয়।
· মতিঝিলে বহুতল কার-পার্ক নির্মিত হয়।
· ভৈরবে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য মৈত্রী সেতু, শিকারপুর-দোয়ারিকা সেতুসহ বেশ কটি বড় সেতু এবং নলকা-হাটিকামরুল-বনপাড়া সড়কসহ বেশ কটি সড়ক চালু করা হয়।
· যমুনা সেতুর ওপর দিয়ে রাজশাহী ও খুলনা থেকে ঢাকা পর্যন্ত রেল চালু করা হয়।
· কয়েক হাজার কিলোমিটার পাকা সড়ক ও নতুন ব্রিজ-কালভার্ট তৈরি হয়।
· তখনকার জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের টার্মিনাল ভবন সমপ্রসারণ ও বহুতল কার-পার্ক নির্মাণ ও যাত্রী-সুবিধা বাড়ানো হয়।
· শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে আওয়ামী আমলে পরীক্ষা প্রহসনে পরিণত হয়েছিল। আমরা দায়িত্ব নিয়ে পাবলিক পরীক্ষায় নকলের মহোত্সব বন্ধ করতে সক্ষম হই।
· আওয়ামী আমলের কেলেংকারী ও ব্যর্থতার বিপরীতে ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে সময় মতো পাঠ্যবই তুলে দেয়া সম্ভব হয়।
· প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে চলমান উপবৃত্তি কর্মসূচির পাশাপাশি প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার এক যুগান্তকারী কর্মসূচি চালু করা হয়।
· শিক্ষকদের আধুনিক ট্রেনিং ও অবকাঠামো উন্নয়নে ৬ বছর মেয়াদী নতুন কর্মসূচি চালু করা হয়।
· এই কর্মসূচির আওতায় ৩৫ হাজার নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়।
· মেয়েদের দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বিনা বেতনে লেখাপড়া ও উপবৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়।
· অসহায় মহিলাদের মাসিক ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি এবং উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়।
· ঢাকায় মহাখালীর ক্যান্সার হাসপাতালের মানোন্নয়ন ও সেবা সমপ্রসারণের পাশাপাশি ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট স্থাপন করা হয়।
· দেশের হাসপাতালগুলোতে বেড সংখ্যা ৩ হাজার বাড়ানো হয়। বিতরণ করা হয় ২ শতাধিক অ্যাম্বুলেন্স।
· নতুন ৭টি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের কাজ শুরু হয়।
· মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে নতুন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়।
· অস্বচ্ছল ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার পরিমাণ ও উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হয়।
· মুক্তিযোদ্ধাদের পোষ্যদের প্রশিক্ষণ ও আত্মকর্মসংস্থান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়।
· পরলোকগত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার-পিছু এককালীন ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান প্রদান করা হয়।
· দেশের ৪টি সিটি করপোরেশন ও ইউনিয়ন পরিষদ সমূহের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়।
· গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত এবং স্থানীয় সরকার কাঠামোকে শক্তিশালী করতে এবং এ প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে গ্রাম-সরকার কর্মসূচি চালু করা হয়।
· বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, নদ-নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি এবং খাল-সংষ্কার কর্মসূচি চালু করা হয়।
· কৃষিতে ভর্তুকি বাড়িয়ে ৩ গুণ করা হয়।
· সহায়তা ও ঋণদান কর্মসূচি গ্রহণ করে কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনকে উত্সাহিত করা হয়।
· কৃষিতে সেচ সহায়তার জন্য কম মূল্যে বিদ্যুত্ সরবরাহ করা হয়।
· টঙ্গীতে নতুন বিদ্যুেকন্দ্রের ভিত স্থাপন ও ময়মনসিংহের বিদ্যুেকন্দ্রে উত্পাদন ক্ষমতা বাড়ানো হয়। বেসরকারি খাতে স্থাপিত মেঘনাঘাট বিদ্যুেকন্দ্রে উত্পাদন শুরু হয়।
· পল্লীবিদ্যুত্ কর্মসূচির আওতায় ৩৫টি উপকেন্দ্র স্থাপন, কয়েক হাজার কিলোমিটার বিদ্যুত্ বিতরণ লাইন নির্মাণ, ৫ হাজার গ্রামে নতুন বিদ্যুায়ন এবং প্রায় সাড়ে ১০ লাখ নতুন বিদ্যুত্ সংযোগ দেয়া হয়।
· দেশের উত্তরাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের উদ্যোগ, বিভিন্ন অঞ্চলে গ্যাস লাইন নির্মাণ ও ২ লাখ নতুন গ্রাহককে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়।
· বড়পুকুরিয়ায় বার্ষিক ১০ লাখ টন উত্পাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লা খনির বাণিজ্যিক উত্তোলন শুরু হয় এবং সে কয়লা ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুত্ উত্পাদন কেন্দ্র নির্মিত হয়।
· সরকারি সকল শূণ্যপদে লোক নিয়োগ করা হয়। ২১ ও ২৩তম বিসিএস উত্তীর্ণদের নিয়োগ দেয়া হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ২১ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী, ৬ হাজার পুলিশ, আড়াই হাজার ডাক্তার, ২ হাজার নার্স ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ৪ সহাস্রাধিক নতুন কর্মচারী নিয়োগ করা হয়।
· বিদেশে জনশক্তি প্রেরণের বন্ধ দরোজা খোলা হয়।
· প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক নতুন মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।
· অর্থনীতি গতিশীল ও স্বনির্ভর হয়ে উঠে।
· উপজেলা পর্যায়ে কারিগরি ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করা হয়।
· আইসিটি-এর ওপর গুরুত্ব দিয়ে মন্ত্রণালয় স্থাপন করা হয়।
· আইসিটি ইন্টার্নশীপ চালু করা হয়। এতে কম্পিউটার বিজ্ঞানে শিক্ষিত ৩ হাজার তরুণ-তরুণী কাজ পায়।
· দক্ষ প্রোগ্রামার ও ট্রেইনার তৈরির জন্য পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পনের কোটি টাকা দেয়া হয়।
· স্কুল-কলেজে কম্পিউটার পৌঁছানো হয়। শিক্ষকদের দেয়া হয় কম্পিউটার ট্রেনিং।
· গরীব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চতর পর্যায়ে কম্পিউটার শিক্ষার জন্য বৃত্তি চালু করা হয়।
· প্রত্যেক জেলায় ইন্টারনেট সুবিধা সম্প্র্রসারণ করা হয়। উপজেলায় এই সুবিধা সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়।
· সাবমেরিন কেবল স্থাপনের কাজ এগিয়ে নেয়া হয়।
· সোয়া ২ লাখ নতুন ডিজিটাল টেলিফোন লাইন স্থাপনসহ কয়েকটি জেলা সদরে অপটিক্যাল ফাইবার লিংক স্থাপন করা হয়।
· টেলিফোন সংযোগ চার্জ অনেক কমানো হয়।
· ক্রিকেটে উন্নতির জন্য ভালো কোচ আনা হয়। ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় সাফ ফুটবল প্রতিযোগিতা। বাংলাদেশ এতে চ্যাম্পিয়ন হয়।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
আমি দুঃখিত একটু দীর্ঘ ফিরিস্তি দেয়ার জন্য।
তবে এই বিবরণীও আমাদের বিগত সরকারের প্রথম ২ বছরের উন্নয়ন-সাফল্যের এক খণ্ডচিত্র মাত্র।
এগুলো আপনারা জানেন। দেশবাসী এসব উন্নয়নের সুফল ভোগ করছেন।
কিন্তু দুঃখের বিষয় জানেন না কেবল বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।
ওই উন্নয়নের সঙ্গে বর্তমান সরকারের ২ বছরের কার্যকলাপের তুলনা করার জন্য আমিও আপনাদের সকলকে অনুরোধ করছি।
সাংবাদিক ভাই-বোনেরা,
আমার কথা তো বললাম। এখন আপনাদের কথাও কিছু বলি।
এই সরকারের দুই বছর পূর্ত্তি উপলক্ষে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা প্রধান শিরোনাম করেছে: “মহাজোট সরকারের দু’বছর পূর্ত্তি আজ\ নির্বাচনী ইশতেহার উপেক্ষিত”। একই পত্রিকার আরেক শিরোনাম : “ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা ঠিক হয়নি দুই বছরে।”
আরেকটি পত্রিকা সাপ্তাহিক বুধবার। তাদের শীর্ষ শিরোনাম : “প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের দুই বছর।”
ওই পত্রিকায় বিশিষ্ট চিন্তাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর লেখা ছাপা হয়েছে : “দিন বদলের দুই বছর : উন্নতির নিচে আর্তনাদ” শিরোনামে।
কমিউনিস্ট নেতা হায়দার আকবর খান রনো লিখেছেন “দিন বদলের স্লোগান এখন হাস্যকর বুলি” শীর্ষক নিবন্ধ।
আমি বেশি উদাহরণ কিংবা বিশদ বিবরণ দিলাম না। কারণ ওই পত্রিকাগুলোর লেখক-সাংবাদিকরা বিএনপি করেন না। তারাই যা লিখেছেন, আমার আর বেশি কিছু বলার প্রয়োজন নেই। তারা যে-সব তথ্য দিয়েছেন ও প্রশ্ন তুলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দয়া করে অন্তত: সে সবের জবাব দেবেন কী?
তবে, প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা, ডাহা মিথ্যেগুলোর জবাব তো একেবারে না দিলে চলে না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের সরকারের আমলে নাকি দেশে এক মেগাওয়াট বিদ্যুত্ও উত্পাদন হয়নি। কিন্তু লুটপাট হয়েছে হাজার কোটি টাকা।
একই মিথ্যা কথা বারবার বলাটা মনে হয় তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
আমি এই সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত ২০১০ সালের ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা’ গ্রন্থ থেকেই এর জবাব দিচ্ছি।
বইটির ১১৮ পৃষ্ঠায় পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, আমাদের সরকারের ৫ বছরে নতুন ১২শ’৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ জাতীয় গ্রীডে সংযোজন করা হয়েছে।
২০০১ সালে আমরা সরকারের দায়িত্ব নেয়ার সময় বিদ্যুতের মোট স্থাপিত উত্পাদন-ক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৫ মেগাওয়াট।
২০০৬ সালে আমরা দায়িত্ব ছাড়ার সময় এই উত্পাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে ৫ হাজার ২শ ৭৫ মেগাওয়াটে উন্নীত করি।
নিজেদের সরকারের এই তথ্য গোপন করে শীর্ষ পর্যায় থেকে যদি অবিরাম মিথ্যা বলা হয়, তাহলে মানুষ কার ওপর আস্থা রাখবে?
সাংবাদিক বন্ধুরা জানেন, এর বাইরেও আমরা ‘ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্ট’ স্থাপনের অনুমতি দেই।
সেইসব প্রকল্পে হ্রাসকৃত মূল্যে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করি।
এতে উদ্যোক্তারা তাদের শিল্পে স্বল্পমূল্যে বিদ্যুত্ উত্পাদনে উত্সাহিত হন।
আমাদের সময়ে বিদ্যুত্ নিয়ে কিছু সমস্যা থাকলেও এখন তা সংকটে পরিণত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুত্ উত্পাদনে সফলতার নানা মেগাওয়াট-কাহিনী শুনিয়েছেন। দেশবাসী এইসব বানোয়াট গল্প আর শুনতে চায় না।
তারা দেখছেন, সরকার বিদ্যুতের সব ধরণের নতুন সংযোগ দেয়া বন্ধ রেখেছে।
তারা জানছেন, দীর্ঘদিন হাত গুটিয়ে বসে থেকে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির পর সরকার আত্মীয়-স্বজন ও দলীয় লোকদের কাছ থেকে চড়া দামে বিদ্যুত্ কেনার উদ্দেশ্যে রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট বসানোর চুক্তি করছে বিনা টেণ্ডারে।
এইসব কাজে কোনো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নেই। বরং রয়েছে বিশাল দুর্নীতির অভিযোগ।
এই অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার জন্য আগামীতে যাতে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে না হয়, তার জন্য এগুলোকে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে।
বিশিষ্টজন ও বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যেই একে ‘দুর্নীতি ও চুরির ইনডেমনিটি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
এতো কিছু করার পরেও বিদ্যুতের অভাবে কারখানা বন্ধ, উত্পাদন ব্যাহত এবং জন-জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
কাজেই, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে মানুষ মেগাওয়াটের হিসাব শুনতে চায় না, পেতে চায় বিদ্যুত্।
আপনারা জানেন, বিশেষজ্ঞদের হিসেবে রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টওয়ালারা আগামী ৩ বছরে লুটে নেবে অতিরিক্ত ২০ হাজার ১শ’ ৭৫ কোটি টাকা।
তার অর্থ হচ্ছে, দুর্নীতি করবেন তারা, আর ভূক্তভোগী হবে জনগণ। আর চলমান দুর্নীতি ঢাকতে অপপ্রচার করবেন, এই খাতে অতীতে দুর্নীতি হয়েছে—সেটা চলবে না।
সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই শেয়ার বাজার লুট হয়ে যায়। এদের আগের সরকারের আমলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সর্বশান্ত হবার কথা আপনারা জানেন। এবারও একই আলামত শুরু হয়েছে।
অব্যবস্থাপনার ফলে দু’বছরেই পুঁজিবাজার ও মানি মার্কেট দুটোকেই সরকার অস্থির করে ফেলেছে। ফলে অর্থনীতি আজ বিপর্যস্ত। ১৯৯৬-এর মতো বর্তমানে সরকারের ছত্রছায়ায় পুঁজিবাজারে চলছে লুটপাট। একটি চক্রকে লুটপাটের সুযোগ করে দিতে সরকারের একেকটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা বারবার পুঁজি হারাচ্ছেন।
সরকার দলীয় এ চক্রটিকে সুবিধা পাইয়ে দিতে বিতর্কিত নির্দেশনার মাধ্যমে কখনো দরপতন আবার কখনও দর-উত্থানের খেলা এখন সবার কাছেই দিবালোকের মতো স্পষ্ট।
ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মূলধন কেড়ে নেয়ার এ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।
মানি মার্কেটে কলমানির সুদের হার ইতিহাসের সর্বোচ্চ, প্রায় ২শ’ শতাংশ হয়ে গিয়েছিল।
মূলত: শাসক দলের সদস্যদের মালিকানাধীন কয়েকটি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণহীন আচরণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
এ সকল নিয়ন্ত্রণহীন ব্যাংক যাতে বিপর্যয়ে না পড়ে, সে উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্বাহী আদেশে কলমানির সুদের হার কৃত্রিমভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে।
মুক্তবাজার অর্থনীতিতে এ ধরণের পদক্ষেপ কখনই কাম্য নয়।
সরকার এক্ষেত্রে দুষ্টের দমনের চাইতে, দুষ্টের তোষণে সচেষ্ট রয়েছে।
ধাবী গ্রুপের কাছ থেকে ওয়ারিদ টেলিকমের ৭০ শতাংশ শেয়ার ক্রয়ের সময় সরকার অবৈধভাবে ভারতীয় এয়ারটেলকে ৪শ’ কোটি টাকার ট্রান্সফার ফি মাফ করেছে বলে সংবাদ-মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি।
ইতিপূর্বে জাপানী কোম্পানী ডকোমো যখন একটেলের ৩০ শতাংশ শেয়ার ক্রয় করে তখন আমাদের সরকার ১শ’৩৫ কোটি টাকা ট্রান্সফার ফি আদায় করে। কিন্তু এবার সরকার ভারতীয় এয়ারটেলের কাছ থেকে কোনো ট্রান্সফার ফি গ্রহণ করেনি।
পরবর্তীতে বিটিআরসি চেয়ারম্যান ব্যাখ্যা প্রদান করেন যে, ভারতীয় এয়ারটেল মাত্র ৭০ লাখ টাকায় অর্থাত্ ১শ’ টাকার প্রতিটি শেয়ার ৬ পয়সা দরে ক্রয় করেছে।
আমি দুর্নীতির রাহুগ্রাস সম্পর্কে সামান্য কিছু ইঙ্গিত দিলাম। আগামীতে সুযোগ পেলে বিস্তারিত বলবো ইনশাআল্লাহ।
সাংবাদিক ভাই-বোনেরা,
প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন যে, অতীতের যে-কোনো সময়ের চাইতে নাকি আইন-শৃঙ্খলা এখন ভালো।
আপনারাই বলুন, এই তথ্য কতটা সত্য!
সরকারি হিসেবেই গত ২ বছরে খুন হয়েছে ৮ হাজারের বেশি মানুষ। নারী ধর্ষণের ঘটনা ৫ হাজারের বেশি। গত অক্টোবর-নভেম্বর এই দু’মাসেই ১শ’ ৮৯ জন গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন। রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রায় ৫শ’ লোক নিহত ও প্রায় ২৭ হাজার লোক আহত হয়েছেন।
গত বছর ইভটিজিংয়ের ঘটনায় ৫ শতাধিক ও প্রতিবাদ করায় ১৮ জন প্রাণ হারিয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনে জীবন দিয়েছে প্রায় ২শ’ মানুষ।
বিচার-বহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন প্রায় আড়াইশ’ জন।
সীমান্তে শুধু গত বছরেই শতাধিক বাংলাদেশীকে হত্যা করা হয়েছে। এর কোনো প্রতিবাদ করার সাহসও সরকার রাখেনা।
এই সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে আমাদের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে।
চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, অগ্নিকাণ্ড, শ্রমিক অসন্তোষের ফলে জানমালের যে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি গত ২ বছরে হয়েছে, সে সম্পর্কে সময়ের অভাবে আমি বিশদ বিবরণ আজ আর দিলাম না।
শিক্ষানীতি প্রণয়ন ও পাঠ্যবই বিতরণের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন মস্ত সাফল্য।
কিন্তু তিনি বলেননি যে, এই শিক্ষানীতি প্রণয়নে একটি বিশেষ মত ও পথের শিক্ষাবিদদের নিয়েই কেবল কমিশন গড়া হয়েছিল।
তারা সমাজের বিভিন্ন স্তরের নাগরিক ও দেশের স্বীকৃত আলেম-ওলামাদের সঙ্গে কোনো আলোচনাই করেননি। ফলে এটি জাতীয় শিক্ষানীতি হিসাবে সার্বজনীন হয়ে উঠেনি।
আমাদের আমলে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণীত ও কার্যকর হয়েছিল। সেই নীতি বাদ দিয়ে হঠাত্ নতুন নীতি প্রণয়নের প্রয়োজন কেন পড়লো, তার ব্যাখ্যাও প্রধানমন্ত্রী দেননি।
গত বছর ভারত থেকে ছাপিয়ে আনা পাঠ্যবইয়ের অর্ধেক এখনও দেশে এসে পৌঁছায়নি। ফলে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর নতুন শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই এখনও পাঠ্যবই থেকে বঞ্চিত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তার কোনো উল্লেখই করেননি।
সারা দেশে অসংখ্য যোগ্য সরকারি কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ অফিসার এবং আনসার-বিডিআরদেরকে প্রায়শই সরকারি দলের ক্যাডাররা বিভিন্ন স্থানে মারধর করছে।
পাবনায় সরকারি কর্মকর্তাদের উপর ছাত্রলীগ-যুবলীগ সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনা সারাদেশে আলোচিত হয়েছে। অথচ সেই সন্ত্রাসীরা এখন সবাই মুক্তি পেয়ে গেছে।
সাংবাদিক বন্ধুগণ,
জাতীয় সংসদকে কার্যকর করার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার প্রয়াস আমাদের রয়েছে।
২০০৮ সালে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত নির্বাচনের রায় মেনে নিয়ে তাই আমরা প্রথম দিন থেকেই সংসদে যোগ দিয়েছিলাম।
কিন্তু আমাদের সঙ্গে কী আচরণ করা হয়েছে, জাতীয় নেতৃবৃন্দ সম্পর্কে কী ধরণের অশালীন উক্তি করা হয়েছে তা সকলেই জানেন।
জনগণের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা বলার জন্য আমরা সংসদে বহু প্রস্তাব ও নোটিশ দিয়েছি।
একটাও গ্রহণ করা হয়নি। আমাদেরকে আলোচনার কোনো সুযোগও দেয়া হয়নি।
বিরোধী দলের নেত্রীর বক্তব্য সরকারের নির্দেশে রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় প্রচার করা হয়নি।
সংসদকে তারা এমনভাবে অকার্যকর করেছে যে, স্পীকার নিজেই একে মাছের বাজারের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
সরকারি দলের সদস্যরা পর্যন্ত সংসদে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলায় সেখানে প্রায়ই কোরাম সংকট দেখা দিচ্ছে।
দেশজাতির সমস্যা নিয়ে যে-সংসদে কথা বলার সুযোগ নেই, সেই সংসদের প্রতি মানুষের কোনো আস্থা থাকে না।
এখন বিচার বিভাগ পর্যন্ত বলছে, এই সংসদ সার্বভৌম নয়।
এরপর আমাদের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কোনো কথা বলার মুখ থাকে কি?
সংসদ বর্জনের যে কালচার তারা সৃষ্টি করেছেন, আমরা তা অনুসরণ করতে চাইনা।
সংসদে আমরা যেতে চাই। পরিবেশ সৃষ্টি করুন। সংসদকে কার্যকর করুন।
আমরা সংসদে কার্যকর ও অর্থবহ ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত আছি।
সাংবাদিক বন্ধুরা,
প্রধানমন্ত্রী নানান রকম চুক্তি করে ভারত সফর শেষে ফিরে বলেছিলেন: ‘আমি জয়ী হনু আজ।’
আশ্চর্যের বিষয়, দুই বছর পূর্ত্তির ভাষণে ভারত সফর ও চুক্তি নিয়ে তিনি একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। এতে সকলে হতবাক হয়েছে।
তাহলে কি এতোদিন পর তিনি বুঝতে পেরেছেন, জয়ী নন, তিনি পরাজিত হয়ে এসেছিলেন?
আগে শুনতাম, ভারতকে ট্রানজিট দিলে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হয়ে যাবে।
এখন শুনছি, গাড়ি ও মাল পরিবহণের টোল দিতেও ভারত রাজী নয়।
সিঙ্গাপুর-তত্ত্বের প্রবক্তারা এখন চুপ হয়ে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী ভারতের এক ব্যাংক থেকে সাত হাজার কোটি টাকা চড়া সুদে, কঠিন শর্তে ঋণ এনেছিলেন। এ নিয়ে আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। সরকার শোনেনি। এখন এ সম্পর্কে সিপিডি’র অর্থনীতিবিদদের বয়ান আপনাদের শোনাচ্ছি।
সিপিডি বলছে : এই ঋণচুক্তিটি মূলত: একটি প্রাগ-ঐতিহাসিক সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট, যা বর্তমান যুগে কোথাও ব্যবহূত হচ্ছে না।
ওই ঋণের টাকায় ভারত থেকে যেসব পণ্য কেনা হবে তা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কিনা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক দরে পাওয়া যাবে কি-না, সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সিপিডি।
অভিন্ন নদীসমূহের পানি ভাগাভাগি ও টিপাইমুখ বাঁধ সম্পর্কেও প্রধানমন্ত্রী সম্পূর্ণ নীরব থেকেছেন।
সীমান্তে নিজ দেশের নাগরিকদের চলমান হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটি কথাও বলেননি তিনি।
বিদেশ থেকে চাকরি হারিয়ে হাজার হাজার বাংলাদেশী নিঃস্ব হয়ে ফিরে আসছে। বিদেশে জনশক্তি প্রেরণের হার ইতিমধ্যেই প্রায় ৩৫ শতাংশ কমেছে। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কোনো উদ্বেগ কিংবা উদ্যোগ নেই।
দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ স্থবির হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে সে সম্পর্কেও থেকেছেন নিশ্চুপ।
প্রিয় ভাই-বোনেরা,
বিরোধী দলের ওপর জুলুম-নির্যাতন এবং নিষ্ঠুর দলীয়করণের চিত্রও আজ আর তুলে ধরতে চাইনা।
বলতে চাই না বিরোধীদলের নেতাদের ধরে নিয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের উদ্দেশ্যে পৈশাচিক নির্যাতনের করুণ কাহিনী।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার নিয়েও আমি আজ বেশি কিছু বলবো না।
শুধু একটি কথা বলবো। তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল : ‘ক্ষমতাধরদের বার্ষিক সম্পদ বিবরণ দিতে হবে।’
তারা এই ম্যানিফেস্টোতে অঙ্গীকার করেছিলেন: ‘প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য এবং সংসদ সদস্য ও তাদের পরিবারের সম্পদের হিসাব ও আয়ের উত্স প্রতিবছর জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে।’
দেশবাসী জানতে চান, এই অঙ্গীকার গত দুই বছরে প্রতিপালন করা হয়নি কেন?
আগেরবার ক্ষমতায় এসে নিজেরা দেশকে বিশ্বের এক নম্বর দুর্নীতিগ্রস্ত দেশে পরিণত করেছিলেন।
এবার ক্ষমতায় এসে নিজেদের দুর্নীতির সব মামলা খারিজ করাচ্ছেন বা তুলে নিচ্ছেন। আর আমাদের বিরুদ্ধে দিচ্ছেন নতুন নতুন মামলা।
এই অবিচার ও বৈষম্যের বিচার কোনোদিনই হবে না বলে কি নিশ্চিত হয়েছেন?
বর্তমান সরকারের আমলে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে ঐতিহ্যবাহী বিডিআর ধ্বংস হয়েছে। নিহত হয়েছেন সেনাবাহিনীর ৫৭ জন মেধাবী চৌকষ অফিসার। নারীরা নির্যাতিত হয়েছেন।
তাদের কান্না আজো থামেনি। সেই রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি।
সেই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার আজও হয়নি। প্রকৃত অপরাধীরা অনেকেই ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। জ্বলন্ত নানান প্রশ্নের কোনো জবাব দুই বছরে মেলেনি। ন্যায্য প্রশ্ন তোলার দায়ে অনেকে নির্যাতিত হয়েছে, চাকরি হারিয়েছে। সরকারের ২ বছর পূর্তি উপলক্ষে সেই প্রশ্নগুলো আমি আজ আবারো দেশবাসীর সামনে তুলে রাখলাম।
সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আপনারা জানেন, শাসক দল আজ সমঝোতা সৌহার্দ ও জাতীয় ঐক্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
ঘৃণা, বিদ্বেষ, বিভাজন এবং প্রশ্নবিদ্ধ বিচারের নামে তারা রক্ত পিপাসা মেটাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
জাতীয় স্বার্থ, নিরাপত্তা, মর্যাদা আজ ভূলুণ্ঠিত। জাতীয় মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি আজ বিপন্ন। ধর্মপ্রাণ নাগরিকরা আক্রান্ত।
এই পরিস্থিতিতে দেশ বাঁচাতে, মানুষ বাঁচাতে, আমাদেরকে গড়ে তুলতে হবে গণমানুষের সার্বিক ঐক্য ও প্রতিরোধ।
চরম এই দুঃসময়ে আমি সকল দেশপ্রেমিকের কাছে সেই নিবিড় ঐক্য গড়ে তোলার উদাত্ত্ব আহ্বান জানাচ্ছি।
সকলকে ধন্যবাদ।
আল্লাহ হাফেজ, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Backstreet Boys - Backstreet Boys - Show Me The Meaning Being Lonely .mp3
Found at bee mp3 search engine
Anupam Roy - Amake Amar Moto Thakte Dao .mp3
Found at bee mp3 search engine

মোট পৃষ্ঠাদর্শন

sironamhin